ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত আর অসংখ্য মানুষের অশ্রুর বিনিময়ে মহান স্বাধীনতা যদ্ধে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। খাদ্য ও বেসামরিক বিভাগ নামে খাদ্য বিভাগ নতুন দেশে যাত্রা শুরু করে। মি: ফণী ভূষণ মজুমদার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রথম মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ সালে এনাম কমিশন কর্তৃক বিভাগটি খাদ্য অধিদপ্তর নামে পুর্নগঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে সৃষ্ট ০৬টি ও ১৯৮৯ সালে সৃষ্ট ০১টি মোট ০৭টি বিভাগ নিয়ে খাদ্য অধিদপ্তর গঠিত হয়। বিভাগগুলো : প্রশাসন, সংগ্রহ, চলাচল ও সংরক্ষণ ও সাইলো, সরবরাহ, বন্টন ও বিপণন, পরিদর্শন, উন্নয়ন ও কারিগরী সেবা, হিসাব ও অর্থ এবং প্রশিক্ষণ বিভাগ।
বিশ্ব বাণিজ্য উদারীকরণ, খোলা বাজার অর্থনীতি প্রবর্তন ও খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৯০ এর দশকে খাদ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে পড়ে। খাদ্যশস্যের সিংহভাগ আমদানী বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। বৈদেশিক খাদ্য সাহায্য কমতে কমতে যৎসামান্য পর্যায়ে আসে। ত্রাণখাত, বিশেষ জরুরী গ্রাহক, খোলাবাজারে চাল ও আটা বিতরণ, ধান, চাল, গম সংগ্রহ কার্যক্রম সংকৃচিত করা হয়। অনেকে মত প্রকাশ করতে থাকেন খাদ্য বিভাগের আর প্রয়োজনীয়তা নেই। দাতাদের পরামর্শে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন সরকার কর্তৃক খাদ্য বিভাগের অভিজ্ঞ ২৫০০ কর্মকর্তাকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক/সোনালী করমর্দনের মাধ্যমে অবসরে পাঠানো হয় এবং অধিদপ্তরের কর্মকান্ডকে বার্ষিক মাত্র ০৫(পাঁচ) লাখ মে: টনে সীমিত করে আনা হয়। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ খাদ্য সংকটে পড়ে। খাদ্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার উর্দ্ধে চলে যায়। মানুষ চরম খাদ্যাভাবে পড়ে। তখন সরকার খাদ্য অধিদপ্তরের গুরুত্ব অনুধাবন করে ও পরবর্তী বছরে বাজেট বৃদ্ধি করে এবং নতুনভাবে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে। গত ২০০৬ হতে ২০০৮ সালে তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য এমন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় যে নীতি নির্ধারকগণ হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হন, সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য মজুদ না থাকলে ও তা বাজারে না ছাড়লে বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। দেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু, ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনীতিতে খাদ্যমূল্যের বিরাট প্রভাব ইত্যাদি কারণ দেশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা প্রয়োজন বিবেচনায় বর্তমান সরকার বিতরণ, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশক সংগ্রহ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করে বাজার দর স্থিতিশীল রাখার জন্য একান্তভাবে চেষ্টা করছেন।
খাদ্যভিত্তিক বিভিন্ন সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা ও আপদকালীন জরুরী প্রয়োজন মেটানোর জন্য সর্বদা ০৮-১০ লাখ মে: টন খাদ্যশস্য সরকানি গুদামে মজুদ রাখার জন্য জাতীয় খাদ্য নীতিতে সিদ্ধান্ত রাখা হয়েছে। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণকালে সরকানি গুদামের খাদ্যশস্যের মোট ধারন ক্ষমতা ছিল ১৪.০০ লাখ মে: টন। গত ০৬ বছরের সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে ২০১৫ সালে সরকারি গুদামের ধারণ ক্ষমতা ১৯.০০ লাখ মে: টনে উন্নিত করেছেন। ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০২১ সালে মধ্যে সরকারি গুদামের ধারণ ক্ষমতা ৩০ লাখ মে: টনে উন্নিত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পর্নতা অর্জন করার পাশাপাশি চলতি বছরের শুরুর দিকে সরকারিভাবে প্রথমবারের মতো শ্রীলংকায় ২৫,০০০ মে: টন চাল রপ্তানী করা হয়েছে এবং সম্প্রতি নেপালের ভূমিকম্প কবলিত অসহায় মানুষের জন্য ত্রাণ সাহায্য হিসেবে ১০,০০০ মে: টন চাল প্রেরণ করা হয়েছে। সরকার প্রায় সারাবছর খোলাবাজারে সুলভমূল্যে চাল ও আটা বিক্রয় কার্যক্রম চালু রেখে খাদ্যশস্যের বাজার দর যথেষ্ট স্থিতিশীল পর্যায়ে রেখেছেন। দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে খাদ্য অধিদপ্তর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস